গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে গতকাল বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালান কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় পুলিশ ১৪ জনকে আটক করেছে।
ওই পথসভার আগে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জ শহরে এসেছিলেন। ছোট ছোট দলে তাঁরা অবস্থান নিয়েছিলেন বিভিন্ন অলিগলিতে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ১৬ জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বেলা ১১টায় জেলা শহরের পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে এনসিপির পথসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। সকাল থেকেই পথসভার মঞ্চ তৈরি ও সামনে চেয়ার গোছানোর কাজ শুরু হয়।
সকাল সাড়ে নয়টা থেকে চালু হয় মাইক। এনসিপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাঝেমধ্যে মাইকে কথা বলছিলেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশের গাড়িতে আগুন ও বেলা সাড়ে ১১টায় ইউএনওর গাড়িতে হামলার খবর আসে। তবে তখনো পৌর উন্মুক্ত মঞ্চের পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।
পুলিশ ও ইউএনওর গাড়িতে হামলার পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সভাস্থলে আসা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা দেখা দেয়। এরই মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় নেতারা ঘোষণা দেন, কেন্দ্রীয় নেতারা পথেই আছেন; পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।
তাঁরা বিভিন্ন স্লোগানও দিতে থাকেন মঞ্চের মাইক থেকে। বেলা ১টা ১২ মিনিটের দিকে একপশলা বৃষ্টি হয়। তখন সভামঞ্চ ছেড়ে পাশে অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা।
সভামঞ্চ ও সামনের চেয়ার মিলিয়ে তখন ৭০-৮০ জন লোক ছিলেন। এ ছাড়া সেখানে ছিলেন পুলিশ সদস্য ও সংবাদকর্মীরা।
বৃষ্টি কিছুটা কমার পর বেলা ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এনসিপির নেতা-কর্মীরা আবার মঞ্চে ওঠেন। এদিকে ১টা ৩৪ মিনিটে গোপালগঞ্জ মহিলা কলেজের সামনের সেতু পার হয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সেখানে আসে।
তারা সভামঞ্চের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় এনসিপির নেতা-কর্মীরা পাশের কোর্ট চত্বরে গিয়ে আশ্রয় নেন।
তখন পুলিশ সুপার আরও সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ ও এনসিপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়ায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
১০ মিনিটের মধ্যে এনসিপির নেতা-কর্মীরা সভাস্থলে এসে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় আশপাশের জেলখানা মোড়, চৌরঙ্গী, বিসিক ব্রিজ ও বিভিন্ন অলিগলিতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে জড়ো হতে শুরু করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লঞ্চঘাট ব্রিজের গোড়ায় বসে কথা হয় গতকালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক তরুণের সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,
‘এখন তো সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক। প্রশাসনকে তো সবাই ভয় পায়। তবে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে এই অঞ্চলের মানুষ কেউই সহ্য করতে পারে না।
তারা (এনসিপি) এখানে সভা না করলেই পারত। তাইলে কোনো গ্যাঞ্জাম হতো না, এই মানুষগুলো মরত না। তিনি বলেন,
‘মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ থেকে হাজার হাজার লোক চলে আসে। তখন মনে হচ্ছিল যুদ্ধ চলছে। ইটপাটকেল, আগুন, টিয়ার শেল, গুলি চলছে, কে কোন দিকে যাবে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা সমাবেশকারীদের আটকাতে আসছিল, তারা কিছুতেই পিছু হটছিল না।’
গ্রাম পুলিশের স্থানীয় এক সদস্য বলেন, সকালে পুলিশের গাড়িতে হামলা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে থেকেই এনসিপি নেতা-কর্মীদের আটকে রাখা ও মারধরের পরিকল্পনা ছিল।
সেভাবে গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিল। তারা ছোট ছোট ভাগে শহরের অলিগলিতে ছিল। আর আধা ঘণ্টা সময় গেলে হয়তো কোনোভাবেই তাঁদের (এনসিপির নেতা-কর্মী) অক্ষত রাখা সম্ভব হতো না।
বেলা ২টা ৪ মিনিটে সভামঞ্চে উপস্থিত হন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ২টা ৪০ মিনিটে পথসভা শেষ হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সবার শেষে বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্য শেষে নেতা-কর্মীরা গাড়িতে উঠছিলেন।
তখন গোপালগঞ্জ লেকপাড়ের লঞ্চঘাট ব্রিজ, মহিলা কলেজ ব্রিজ, কাঁচাবাজার ব্রিজ ও বিসিক ব্রিজ পার হয়ে হামলাকারীরা সভাস্থলের দিকে আসতে শুরু করে।
এ সময় তাদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে ও লাঠি উঁচিয়ে সবাইকে সরে যেতে বলে।
তবে হামলাকারীরা পিছু না হটে আরও সামনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এরই মধ্যে পুলিশ এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তাঁদের গাড়িবহরের সামনে-পেছনে অন্তত ১৫টি পুলিশের গাড়ি ছিল। সামনের কয়েকটি গাড়ি একটু এগোতেই বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
তখন পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এরই মধ্যে পুলিশ গাড়িবহর ঘুরিয়ে এনসিপি নেতাদের নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দিকে নিয়ে যায়।
পরে ওই কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লঞ্চঘাট ব্রিজের গোড়ায় বসে কথা হয় গতকালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক তরুণের সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,
‘এখন তো সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক। প্রশাসনকে তো সবাই ভয় পায়। তবে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে এই অঞ্চলের মানুষ কেউই সহ্য করতে পারে না।
তারা (এনসিপি) এখানে সভা না করলেই পারত। তাইলে কোনো গ্যাঞ্জাম হতো না, এই মানুষগুলো মরত না। তিনি বলেন,
‘মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ থেকে হাজার হাজার লোক চলে আসে। তখন মনে হচ্ছিল যুদ্ধ চলছে। ইটপাটকেল, আগুন, টিয়ার শেল,
গুলি চলছে, কে কোন দিকে যাবে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা সমাবেশকারীদের আটকাতে আসছিল, তারা কিছুতেই পিছু হটছিল না।’
গ্রাম পুলিশের স্থানীয় এক সদস্য বলেন, সকালে পুলিশের গাড়িতে হামলা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে থেকেই এনসিপি নেতা-কর্মীদের আটকে রাখা ও মারধরের পরিকল্পনা ছিল।
সেভাবে গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিল। তারা ছোট ছোট ভাগে শহরের অলিগলিতে ছিল। আর আধা ঘণ্টা সময় গেলে হয়তো কোনোভাবেই তাঁদের (এনসিপির নেতা-কর্মী) অক্ষত রাখা সম্ভব হতো না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লঞ্চঘাট ব্রিজের গোড়ায় বসে কথা হয় গতকালের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক তরুণের সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন,
‘এখন তো সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক। প্রশাসনকে তো সবাই ভয় পায়। তবে বঙ্গবন্ধু নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে এই অঞ্চলের মানুষ কেউই সহ্য করতে পারে না।
তারা (এনসিপি) এখানে সভা না করলেই পারত। তাইলে কোনো গ্যাঞ্জাম হতো না, এই মানুষগুলো মরত না। তিনি বলেন,
‘মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ থেকে হাজার হাজার লোক চলে আসে। তখন মনে হচ্ছিল যুদ্ধ চলছে। ইটপাটকেল, আগুন, টিয়ার শেল, গুলি চলছে, কে কোন দিকে যাবে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
কিন্তু যারা সমাবেশকারীদের আটকাতে আসছিল, তারা কিছুতেই পিছু হটছিল না।’
গ্রাম পুলিশের স্থানীয় এক সদস্য বলেন, সকালে পুলিশের গাড়িতে হামলা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে থেকেই এনসিপি নেতা-কর্মীদের আটকে রাখা ও মারধরের পরিকল্পনা ছিল।
সেভাবে গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিল। তারা ছোট ছোট ভাগে শহরের অলিগলিতে ছিল। আর আধা ঘণ্টা সময় গেলে হয়তো কোনোভাবেই তাঁদের (এনসিপির নেতা-কর্মী) অক্ষত রাখা সম্ভব হতো না।
স্থানীয় এক বাসিন্দার ভাষ্য, হামলাকারীদের মূল প্ল্যান ছিল তাদের (এনসিপি) সমাবেশ করতে না দেওয়া। কিন্তু পরে বহু মানুষ জড়ো হয়ে যায়।
তখন হামলা ও মারধর করার লক্ষ্য হয়ে যায়। যেভাবে শুরু হয়েছিল, তাতে তারা যে অক্ষত গোপালগঞ্জ থেকে বের হতে পেরেছে, এটা বড় ব্যাপার।
পুলিশকেও চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলেছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়। সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলের উত্তর দিক দিয়ে,
অর্থাৎ বিসিক মোড় থেকে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। তখন তাঁরা ইটপাটকেল ও হামলার মুখে পড়েন। সড়ক পরিষ্কার করে তাঁরা গাড়িবহরকে শহর থেকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও লোক জড়ো হয় আশপাশের অলিগলিতে। সেখান থেকে চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
থেমে থেমে কয়েক দফায় এ সংঘর্ষ হয় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। এর মধ্যেই বিকেল ৫টা ৫ মিনিটের দিকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর ঘোনাপাড়া হয়ে মোল্লারহাট ব্রিজ পার করে দেন।
পরে ওই গাড়িবহর খুলনায় পৌঁছায়।
গাড়িবহর বের হওয়ার সময় সেনাসদস্যরা সামনে থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়েন। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঘোনাপাড়া মোড় পার হওয়ার সময়ও গাড়িবহরের পেছন দিকে হামলা চালায় একদল লোক। ইটপাটকেলের পাশাপাশি লাঠি ছুড়ে মারা হয়।
বিকেল থেকে শহরের অলিগলির মোড় ও গোপালগঞ্জ পাটগাতী সড়কের বিভিন্ন স্থানে বাঁশ ও গাছ ফেলে এবং ইট রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
মোড়ে মোড়ে বাঁশ, কাঠ, ভাঙা চেয়ার ও টায়ার দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়।
প্রথম আলোর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
Post a Comment