১৪ জুন থেকে জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পার্শ্ববর্তী সাগর উপকূলে ছোট আকারের কিছু নৌকা মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে।
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরায় বাধা দেওয়া, নৌযান নিয়ে যাওয়া ও মাছ লুট করার অভিযোগ উঠছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে।
এমন পরিস্থিতিতে ৯ দিন ধরে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন কক্সবাজারের টেকনাফের বেশির ভাগ জেলে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অলস পড়ে রয়েছে চার শতাধিক মাছ ধরার নৌযান। জেলে, নৌযানের মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
১৩ জুন গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে টেকনাফের তিনটি মাছ ধরার নৌযান অস্ত্রের মুখে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। জেলেদের দাবি, ওই তিন নৌযানে থাকা মাছ, জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রী লুট করেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এরপর নৌযান তিনটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
একই সময় আরও কয়েকটি ট্রলারকেও ধাওয়া করে আরাকান আর্মি।
এ ঘটনার পরদিন ১৪ জুন থেকে জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
তবে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পার্শ্ববর্তী সাগর উপকূলে ছোট আকারের কিছু নৌকা মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। এসব নৌকার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
সাজেদ আহমদ, সভাপতি, টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি
টেকনাফ কায়ুকখালীয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়া বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরতে যেতে বাধা দিচ্ছে আরাকান আর্মি।
ট্রলারে লুটপাট করা হচ্ছ। তাই টেকনাফের চার শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
গতকাল রোববার বিকেলে টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালিয়া ঘাট ও শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়াঘাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নৌঘাটগুলোতে সারি বেঁধে নোঙর করা হয়েছে মাছ ধরার নৌযান। ঘাটে জেলেদের পরিচিত ভিড়ও নেই।
কয়েকজন শ্রমিক নৌযান পাহারা দিচ্ছেন।
আর কিছু জেলেকে জাল মেরামত করতে দেখা যায়। কায়ুকখালিয়া ঘাটে কথা হয় হাবিবুর রহমান ও আবদুল আজিজ নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে।
তাঁরা বলেন, এখন সাগরে ইলিশ ধরার মৌসুম। কিন্তু মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বাধার মুখে তাঁরা মাছ ধরতে পারছেন না।
সাগরে মাছ ধরায় সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর আরাকান আর্মির এমন তৎপরতায় টেকনাফের অধিকাংশ জেলে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন।
মাছ ধরার দুটি নৌযানের মালিক শহিদ উল্লাহ ও আবুল কামাল বলেন, সামনে এমনিতেই সাগর উত্তাল থাকবে। তখন মাছ ধরা ঝুঁকিপূর্ণ।
অথচ এখন সাগরে মাছ ধরার মতো পরিবেশ থাকলেও আরাকান আর্মির তৎপরতার মুখে তা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
কায়ুকখালিয়া ঘাটে মাছের ব্যবসা করেন আবদুল জলিল ও সৈয়দ আলম। তাঁরা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ঘাট থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫টি ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ঢাকা-চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এখন কোনো যানবাহনই মাছ নিয়ে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
সরেজমিনে গতকাল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলাপাড়া ও দক্ষিণপাড়া ঘাটে গিয়েও দেখা যায়, প্রায় দেড় শতাধিক মাছ ধরার নৌযান ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জেলে খলিলুর রহমান, আজম উল্লাহ, রহমত আলী, বনী আলম ও আবদুল হোসেন জানান, গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে হয় মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়ার পাশ দিয়ে।
সেখানেই আরকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের জেলেদের বেশি হয়রানি ও লুটপাট করছেন।
মাছ ধরতে না পারায় প্রতিটি জেলে পরিবারে অর্থসংকট দেখা দিয়েছে। সংসার চালাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
নৌযান মালিক সমিতির নেতারা জানান, ১৩ জুন আরাকান আর্মির নিয়ে যাওয়া তিনটির নৌযানের মধ্যে দুটি টেকনাফের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের।
অপরটির মালিক মোহাম্মদ শওকত আলম নামে এক ব্যক্তি। স্পিডবোটে করে আরাকান আর্মির সদস্যরা এসে অস্ত্রের মুখে নৌযান তিনটি নিয়ে যান।
মাছ ধরার নৌযানগুলোর প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮ জন করে জেলে ছিল। কিছু জেলেকে মারধরও করে আরাকান আর্মি। পরে তাঁদের নৌযানসহ ছেড়ে দেওয়া হয়।
নৌযান মালিক সমিতির নেতারা জানান, ১৩ জুন আরাকান আর্মির নিয়ে যাওয়া তিনটির নৌযানের মধ্যে দুটি টেকনাফের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের। অপরটির মালিক মোহাম্মদ শওকত আলম নামে এক ব্যক্তি।
স্পিডবোটে করে আরাকান আর্মির সদস্যরা এসে অস্ত্রের মুখে নৌযান তিনটি নিয়ে যান। মাছ ধরার নৌযানগুলোর প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮ জন করে জেলে ছিল।
কিছু জেলেকে মারধরও করে আরাকান আর্মি। পরে তাঁদের নৌযানসহ ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর আগেও জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া ও মাছ ধরতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গত ১২ মে টেকনাফের হ্নীলাসংলগ্ন নাফ নদী থেকে সিদ্দিক হোসেন (২৭), রবিউল আলম (২৭) ও মাহমুদ হোসেন (৩০) নামের তিন বাংলাদেশিকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে আরাকান আর্মি। দুই দিন পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
৫ মার্চ সেন্ট মার্টিন উপকূলে মাছ ধরার সময় ৬টি ট্রলারসহ প্রায় ৫৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের নাফ নদী থেকে চারটি মাছ ধরার নৌকাসহ ১৯ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, সরকার এই সংকট
কাটানোর উদ্যোগ না নিলে জেলেদের দুর্দশা আরও বাড়বে। জেলেরা মাছ না ধরায় হাটবাজারেও মাছের সংকট দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে
এরই মধ্যে অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। বিজিবির প্রচেষ্টায় গত ডিসেম্বর
থেকে কয়েক দফায় মিয়ানমার থেকে ১৮৯ জন জেলেকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ২৭টি নৌযান ফেরত এনে মালিকদের হস্তান্তর করা হয়।
তবে নতুন করে সমস্যায় পড়ার বিষয়টি জেলেরা কেউ বিজিবিকে অবহিত করেনি। এরপর বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সাগরে বাংলাদেশি জেলেদের মাছ ধরায় বাধা দেওয়া ও নৌযান নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নৌযান
মালিকদের মাধ্যমে জেনেছি। কোস্টগার্ডের সদস্যরা এসব এলাকায় সব সময় সতর্ক রয়েছেন। জেলেরা যাতে কোনোভাবেই জলসীমা অতিক্রম না করেন।
প্রথম আলোর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
إرسال تعليق