১৮ ঘণ্টায় কী ঘটেছিল, যা ট্রাম্পকে শুল্কনীতি স্থগিত করতে বাধ্য করেছিল

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: রয়টার্স







যুক্তরাষ্ট্র ৯ এপ্রিল হঠাৎ করেই আমদানি পণ্যের ওপর ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে বন্ডের বাজারে বেজে ওঠে অশনিসংকেত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক বাণিজ্যে পরিবর্তনের উদ্যোগ গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে।




নতুন মার্কিন শুল্কনীতির প্রভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১২ শতাংশ বাজার মূলধন হারায়।




 এরপরও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অব্যাহতভাবে বলতে থাকেন, তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ট্রাম্পের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন এবং কয়েক দশকের পুরোনো বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে বাতিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা বেশ ভালোভাবে কার্যকর হবে।





হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন শেয়ারবাজার (ওয়াল স্ট্রিট) বুঝতে পারে না, একজন সাধারণ মার্কিন নাগরিক প্রতিদিন কী চান—আর সাধারণ নাগরিকেরা এখনো ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।




কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেন। তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত আরও উত্তপ্ত করে তুললেও অন্যান্য দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করেন। এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে পুঁজিবাজারের সূচকে বড় ধরনের উত্থান ঘটে।




মাত্র এক সপ্তাহ আগে নেওয়া শুল্কনীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে পোস্ট দেওয়ার প্রায় ৯০ মিনিট পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, মানুষ এটিকে আর্থিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দিন হিসেবে আখ্যায়িত করছে।’




ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত অনেককেই হতবাক করেছে। বিশেষ করে যখন তাঁর প্রশাসন বলে আসছিল, এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে চান ট্রাম্প।

তবে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টারা বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন, যাঁরা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা ও বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মন্দার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। 



এমন পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

গতকাল বুধবার বিকেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কয়েক দিন ধরেই তিনি নিজের মত বদলানোর কথা ভাবছিলেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আজ সকালেই, বেশ সকালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত এ–সংক্রান্ত পরিকল্পনা লিখে ফেলি।




 আমরা কোনো আইনজীবীর দ্বারস্থ হইনি। আমরা এটি আমাদের হৃদয় থেকে লিখেছি।’



গত মঙ্গলবার রাতে ফক্স নিউজে শন হ্যানিটির রাত ৯টার অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একদল রিপাবলিকান সিনেটরের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ করেন ট্রাম্প।



 এ সময় কিছু সিনেটর ট্রাম্পের নতুন আরোপিত শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই সন্ধ্যায় ট্রাম্প বন্ড বাজারেও নজর রাখছিলেন, যেখানে মানুষজন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। গতকাল ট্রাম্পই এ কথা বলেছেন।




শন হ্যানিটির সাক্ষাৎকারের শেষে বিজ্ঞাপন বিরতির আগে সিনেটর জন নিলি কেনেডি শুল্ক নিয়ে ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে উপস্থাপকের কাছে ১৫ সেকেন্ড সময় চেয়েছিলেন।’




মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ট্রাম্প এবং তাঁর বাণিজ্য উপদেষ্টারা বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এবং বিদেশি নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন, যাঁরা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা এবং বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মন্দার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে কিছু করার জন্য তাঁরা ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।



 

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে কেনেডি বলেন, সময় চাওয়ার কারণ ছিল, সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তাঁকে বলেছিলেন, ট্রাম্প অনুষ্ঠানটি দেখবেন। হ্যানিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কেনেডি ও গ্রাহাম ছাড়াও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন, রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট, সাউথ ক্যারোলাইনার কেটি বয়েড ব্রিট, আরকানসর টম কটন, টেক্সাসের টেড ক্রুজ এবং ওকলাহোমার মার্কওয়েন মুলিন উপস্থিত ছিলেন।



কিছু সিনেটর ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এসব সিনেটরের কয়েকজন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।




গ্রাহাম বলেন, তিনি মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘কোনটা যথেষ্ট আর কোনটা যথেষ্ট নয়, তা ঠিক করার দায়িত্ব আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, আপনি বুঝতে পারছেন, মানুষজন সত্যিকারের অগ্রগতি চাইছে।’





0 Comments

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post