চাঁদা দাবি করে বৈষম্যবিরোধীদের নেতা বললেন, ‘ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে’

 

নাহিদ হাসান খন্দকার
নাহিদ হাসান খন্দকারছবি: সংগৃহীত



‘আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে, ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন, তাহলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক। জানেন তো, সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’—এই কথোপথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর।



ওই কথোপথনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে এই চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সংগঠন থেকে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন নাহিদ হাসান।



গতকাল শনিবার সকালে ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপে নাহিদকে দেখা যায়। ভিডিওতে অপর পাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। তবে বালু উত্তোলন ও পার্ক নির্মাণের বিষয়ে ভিডিওতে কথা বলতে শোনা যায়।




ভিডিওর কথোপকথনে নাহিদ বলেন, ‘আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে। আপনি কথা বলেন, যদি আপনার মনে হয় একটু ইয়া করবেন, একটা সংগঠন করতে গেলে কী কী করতে হয়, আপনি তো জানেন। এ হচ্ছে কথা। আমি চাচ্ছি না আপনার কোনো সমস্যা হোক। 



যদি আপনাদের দিক থেকে মনে হয় কোনো সমস্যা হচ্ছে, তাহলে আপনি ভাইয়ের (পার্ক কর্তৃপক্ষ) সাথে কথা বলেন। আপনাদের গলায় পাড়া দিয়ে আমি কিছু করতে পারব না।’ 


এ সময় নাহিদকে উদ্দেশ্য করে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তুমি যদি বলো সেখানে বালুর ব্যবসা হচ্ছে, তাহলে সেটা বন্ধ করে দিই। এক লাখ টাকা দিতে পারব না, পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছি।’ তখন নাহিদ বলেন, ‘ব্যবসা আপনি বন্ধ করবেন কেন, ব্যবসা আপনি চালান।


 ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। প্রয়োজনে সময় নেন। আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে, ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন, তাহলে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক।


 জানেন তো সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও ওই কথোপকথনের ঘটনা এক সপ্তাহ আগের। রংপুর নগরের হাজিরহাট এলাকায় একটি ইকোপার্কের নামে অবৈধভাবে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। 



কথোপকথনের কথা স্বীকার করে ইকোপার্ক পরিচালক বেলাল হোসেন বলেন, ‘নাহিদ তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চাচ্ছিলে। তিনি জেলা প্রশাসকের ভয় দেখান, এর ভয় দেখায়, ওর ভয় দেখায়। ভিডিওটি তাঁরাই করেছিলেন এবং পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে ভিডিওটি তাঁরা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেননি তবে দাবি করেন বেলাল। 



এই অভিযোগ অস্বীকার করে নাহিদ হাসান খন্দকার বলেন, ‘ছয় থেকে সাত দিন আগে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কারও কাছে এক টাকাও নেইনি। তাঁরা কোনো প্রমাণও দিতে পারবেন না।


 এটা পুরোটাই যুবলীগের একটি অংশ সাজিয়েছে। পুরোটাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।’ এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না উল্লেখ করে সংগঠন থেকে নাহিদকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে। 



গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখ্য সংগঠক আলী মিলনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিন দিনের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধ কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে, সেটি আমাদের দল খতিয়ে দেখছে।



 প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কেউ তাঁকেসহ এই প্ল্যাটফর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অভিযোগের প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার আবু সাইম প্রথম আলোকে বলেন, কানাডাপ্রবাসী একজন লোক তাঁর কাছে ইকোপার্ক নির্মাণে চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে অভিযোগ করতে বললে তিনি তা করেননি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।






0 Comments

Post a Comment

Post a Comment (0)

Previous Post Next Post