‘না’ ভোটসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব

 

নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আজ সোমবার সন্ধ্যায়
নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আজ সোমবার সন্ধ্যায়ছবি: প্রথম আলো   prothomalo news






গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। 


তাতে নির্বাচন বাতিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত হলে নির্বাচনে কোনো আসনের ভোট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওই আসনের পুরো ভোট বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।


আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫, 


পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫–এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। 


বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, আবদুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন,

 ‘আরপিওতে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও বাতিল নিয়ে যে বিধানগুলো ছিল, যেখানে পুরো কনস্টিটিয়েন্সির (আসন) নির্বাচন বাতিল বা ফলাফল বাতিল করার যে সক্ষমতা, সেটাকে সীমিত করা হয়েছিল। 


সেটা আবার পুনঃস্থাপন করা হয়েছে, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন অবস্থা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করা, এক বা একাধিক বা সমস্ত কনস্টিটিয়েন্সির ফলাফল বাতিল করতে পারবে।’


‘না’ ভোটের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে মো. সানাউল্লাহ বলেন, এই ‘না’ ভোটের বিধানটা হবে যদি কোথাও একজন প্রার্থী হয়, তাহলে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন না।


 সার্বিকভাবে ‘না’ ভোট নয়। যদি কোন কনস্টিটিয়েন্সিতে (আসন) মাত্র একজন ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) হন, তাঁকেও নির্বাচনে যেতে হবে। 


তাঁর বিপক্ষে ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে যদি ‘না’ বিজিত হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবে।

নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে শামিল করার প্রস্তাব হয়েছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।


 তিনি বলেন, ‘যেহেতু ইভিএমের ব্যবহার হবে না মর্মে আমরা ইতপূর্বেই কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই ইভিএম–সংক্রান্ত যাবতীয় প্রভিশন বিলুপ্ত করা হয়েছে। 


নির্বাচন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অবহেলাজনিত যে শাস্তিগুলো আছে, সে শাস্তিগুলো ক্লিয়ারলি ডিফাইন (সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত) করা হয়েছে।


 এ বিষয়ে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তীতে এটা বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে যে এটার ফিডব্যাক গৃহীত ব্যবস্থা সম্বন্ধে যেন কমিশনকে জানানো হয় এবং ভবিষ্যতে এটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পার্সোনালের মধ্যে থাকবে।'


আরপিও সংশোধনে কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক ও সংবাদকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মো. সানাউল্লাহ জানান। 


তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে শর্ত একই বলবৎ থাকবে সবার জন্য। 


ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাঁরা থাকতে চাইবেন, তাঁদের পুরাটা সময় থাকতে হবে। মাঝপথে বের হয়ে যাওয়া যাবে না।


একই আসনে সমান ভোট পেলে লটারিতে বিজয়ী ঘোষণা করার বিধান বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

নির্বাচনী প্রচারে আলোকসজ্জার ওপর নিষেধাজ্ঞা রেখে ডিজিটাল বিলবোর্ডে আলোর ব্যবহারের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।


প্রার্থীর নির্বাচনে ব্যয়ের হিসাবের বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ জানান।


 তিনি বলেন, প্রার্থীদের ব্যয়ের অডিটের ব্যাপারটাকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং আরেকটু একনিষ্ঠভাবে দেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেগুলোতে ব্যত্যয় থাকতে পারে বলে মনে করে,


 সেগুলোকেই অডিট করবে। ইতিপূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তি পর্যায় থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৫০ লাখ পর্যন্ত অনুদান বা ডোনেশন নিতে পারত। 


এটাকে ৫০ লাখ করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই শর্ত দেওয়া হয়েছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ট্রানজিকশন হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ট্যাক্স রিটার্নে এটা দেখাতে হবে।


এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে ইসির ক্ষমতার আওতা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মিথ্যাচার বা অপবাদ ছড়ানো ইত্যাদি ব্যাপারে প্রার্থী, দল, সংস্থা, গণমাধ্যম—সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।





প্রথম আলোর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন








0 تعليقات

إرسال تعليق

Post a Comment (0)

أحدث أقدم