মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার রাতে যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধে সরাসরি যোগ দিলেন, তখন মনে হচ্ছিল পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ নেবে।
১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়।
পরে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ১৭টি বাংকার–বিধ্বংসী বোমা ও দুই ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পাল্টা জবাব আসে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় তারা কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সেন্ট্রাল কমান্ড ঘাঁটি আল-উদেইদে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
এ হামলায় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাতারের রাজধানী দোহার ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানে মার্কিন হামলার পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেন, এ হামলায় ভয়ানক প্রতিশোধের চক্র তৈরি হতে পারে, কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি। উল্টো হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
এ যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
কিন্তু মার্কিন ঘাঁটিতে এমন একটি হামলার পরও কীভাবে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলো? উঠেছে সেই প্রশ্ন।
ইরানের সামনে কী কী বিকল্প ছিল
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা ছিল একেবারেই প্রত্যাশিত।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর কয়েকটি ইরানের আশপাশেই অবস্থিত।
আল-উদেইদ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনে অবস্থিত।
এ দুটির অবস্থান ইরান থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরত্বে।
এ ছাড়া সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি, ইরাকে তিনটি এবং কুয়েত ও জর্ডানে একটি করে মার্কিন বিমানঘাঁটি আছে। ওমানে চারটি লজিস্টিকস–সংক্রান্ত মার্কিন বিমানঘাঁটি আছে।
আল–জাজিরার সাংবাদিক দোরসা জাব্বারি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি ঘাঁটিতে ৪০ হাজার সেনা রয়েছেন। ঘাঁটিগুলোর আটটি স্থায়ী।
ইরান আগে থেকেই বলে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তবে এসব ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এক বিশ্লেষণে বলেছে, আগে যখন কেউ ইরানকে আঘাত করেছে,
তখন তেহরান নিজেদের সেনা না পাঠিয়ে সমর্থক মিলিশিয়া গোষ্ঠী দিয়ে (যেমন ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ) প্রতিশোধ নিয়েছে। এটাই ছিল তাদের প্রধান কৌশল।
সেই হিসেবে হুতি মিলিশিয়ারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা চালাতে পারত কিংবা ইরান নিজেই হরমুজ প্রণালিতে জাহাজে হামলা করতে পারত।
আর এমনটি ঘটলে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাণিজ্যিক নৌপথ হুমকির মুখে পড়ত।
কিন্তু এবার সে ধরনের কোনো হামলা হয়নি। এটা ইঙ্গিত করে যে ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ বা এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স দুর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে
কয়েক মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে তারা ক্লান্ত। আইএসডব্লিউ তাদের ওয়েবসাইটে এমনটাই বলেছে।
তবু পুরো বিশ্ব যখন ইরানের পক্ষ থেকে বড় প্রতিশোধের অপেক্ষায় ছিল, তখন সোমবার ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনসারি আল–জাজিরাকে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর একটা পথ খোলা থাকতে পারে।
আনসারি আরও বলেন, ‘বাহ্যিকভাবে অনেক হুমকি আসবে। কিন্তু পর্দার আড়ালে আলোচনা চলবে।’ এ কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরান মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
হামলাটি কীভাবে হয়েছিল
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় ইরান কাতারের দিকে হামলা চালায়। কাতার এ হামলাকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক ও কাতারের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন’ বলে নিন্দা জানায় এবং দোহায় ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে।
তবে বিশেষজ্ঞ আনসারির বলা ‘পর্দার আড়ালের যোগাযোগ’ সম্ভবত আগে থেকেই শুরু হয়েছিল।
ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের আগেভাগে জানানোয় ইরানকে ধন্যবাদ। এতে কোনো প্রাণহানি হয়নি, কেউ আহতও হননি।’
এই সতর্কতার ফলে কাতারও প্রস্তুতি নিতে পেরেছিল। তারা ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১৩টি ভূপাতিত করে এবং ১টি ক্ষেপণাস্ত্র ‘নিরাপদ’ পথে যেতে দেয়।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগেই আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান ও কর্মীদের সরিয়ে নেয়।
তাই হামলাটি প্রাণহানির দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা কাতার বিমানবাহিনীর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
হামলার তিন ঘণ্টা পর ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, কোনো মার্কিন নাগরিক আহত হননি। তেমন কোনো ক্ষতিও হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, তারা (ইরান) তাদের ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছে।’
এর মাত্র দুই ঘণ্টা পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘সবাইকে অভিনন্দন! ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগেই আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান ও কর্মীদের সরিয়ে নেয়। তাই হামলাটি প্রাণহানির দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা কাতার বিমানবাহিনীর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
হামলার তিন ঘণ্টা পর ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, কোনো মার্কিন নাগরিক আহত হননি। তেমন কোনো ক্ষতিও হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, তারা (ইরান) তাদের ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছে।’
এর মাত্র দুই ঘণ্টা পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘সবাইকে অভিনন্দন! ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগেই আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে বিমান ও কর্মীদের সরিয়ে নেয়।
তাই হামলাটি প্রাণহানির দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি বা কাতার বিমানবাহিনীর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
হামলার তিন ঘণ্টা পর ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, কোনো মার্কিন নাগরিক আহত হননি।
তেমন কোনো ক্ষতিও হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, তারা (ইরান) তাদের ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছে।’
এর মাত্র দুই ঘণ্টা পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘সবাইকে অভিনন্দন! ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
প্রথম আলোর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
إرسال تعليق